নির্বাচনে অংশ নিতে আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে অন্য ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম পদত্যাগ করবেন কি না—তা এখনো অনিশ্চিত। তিনি নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে সরকারে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আসিফ মাহমুদ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি ঢাকার ভোটারও হয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদ ছাড়বেন বলেই ধারণা মিলেছে।
এনসিপি সূত্র সমকালকে জানিয়েছে—তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লক্ষ্মীপুর–১ আসনে তাঁর প্রার্থী হওয়ার আলোচনা থাকলেও তা হচ্ছে না। অন্যদিকে, আসিফ মাহমুদ ঢাকা–১০ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এনসিপি যদি বিএনপির সঙ্গে জোট করে, তবেই তিনি এনসিপিতে যোগ দেবেন; জোট না হলে তিনি বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন—এমন সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত মাহফুজ আলমের হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানিয়েছে—তিনি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির সম্ভাব্য জোটের বিরোধী, এবং এ অবস্থানেও পরিবর্তন আসেনি।
এনসিপি ইতোমধ্যে এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করেছে। আরও কয়েকটি দল জোটে যোগ দিতে পারে। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠরা এই জোটের বিরোধিতা করছেন; তারা বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জোটের পক্ষে।
এক–দুই দিনের মধ্যেই এনসিপি প্রায় ১০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে। তবে আসিফ মাহমুদের নাম ওই তালিকায় থাকবে না। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে না বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরোধিতা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকারের দমন–পীড়নের প্রতিবাদে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। তিন মাস পর উপদেষ্টা হন মাহফুজ আলম। তিনজনই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন।
পরবর্তীকালে নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করে এনসিপির দায়িত্ব নেন। সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করলেও পরে সে বিষয়ে আর জোর দেয়নি।
সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী উপদেষ্টারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—উপদেষ্টারা প্রার্থীও হতে পারবেন না। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে উপদেষ্টাকে তফসিল ঘোষণার আগে নাকি মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে পদত্যাগ করতে হবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করবে।