• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
  • ১৯শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭
  • এখন সময়, রাত ৯:১২

সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণায় প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন

অনলাইন ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ও চার নির্বাচন কমিশনার। একই সঙ্গে তফসিলের পূর্ণ বিবরণসহ সিইসির জাতির উদ্দেশে ভাষণ আজই রেকর্ড করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ভাষণ প্রচারের কথা থাকলেও প্রয়োজন হলে তা আগামীকাল প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি সূত্র।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল তফসিল ঘোষণার পর অনুমতি ছাড়া সব ধরনের আন্দোলন–সমাবেশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী তফসিল চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী সভা–সমাবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রচারের জন্য সমাবেশের ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাতে হবে। মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের পরই আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করা যাবে। তফসিল ঘোষণার পর মাঠে নামবেন ৫০০–এর বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনী নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পাবে। নির্বাচনকালীন নির্দিষ্ট সংখ্যক সামরিক কর্মকর্তাও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকবেন।

এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সিইসি। আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিকেলে ভাষণ রেকর্ড করা হবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ডাকযোগে (পোস্টাল) ভোট এবং প্রবাসী ভোটারদের গণভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অর্ধশতাধিক দল অংশ নিচ্ছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগ ভোটে অংশ নিতে পারছে না। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ভোটে অংশ নিলেও তাদের একটি অংশ ইতোমধ্যে জেপির সঙ্গে জোট করেছে। চলতি সপ্তাহে ইসির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তফসিল ঘোষণার পক্ষে মত দিয়েছে; তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জামায়াত ও এনসিপি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তফসিল ঘোষণায় অনিশ্চয়তার গুঞ্জন থাকলেও দলটি ইসিকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

দেশে মোট ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ ভোটারের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র ও ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ রাখা হয়েছে। পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে গড়ে তিন হাজার এবং প্রতি কক্ষে গড়ে ৫০০–৬০০ ভোটার থাকবে।
৫০ লাখ প্রবাসী ভোটার প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন; তাদের নিবন্ধন ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।


আন্দোলন–সমাবেশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান

তফসিল ঘোষণার পর অনুমোদনবিহীন সমাবেশ ও আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর জানানো হয়—বেআইনি সমাবেশে অংশ নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রায় ৯ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে—যা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বোচ্চ।


তফসিল–ভোটের দিনের ব্যবধান প্রায় দুই মাস

ইসি জানিয়েছে, তফসিল থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত প্রায় দুই মাস ব্যবধান রাখা হবে। ফলে মনোনয়ন জমা, বাছাই ও প্রত্যাহারের সময়সীমা আগের তুলনায় বাড়ানো হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিক প্রচারের সর্বোচ্চ সময় ২১ দিনই থাকবে।
নতুন আরপিও সংশোধনী, আচরণবিধি, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭। ৮১টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং ইইউসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


ইসি আনোয়ারুল: সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন—সব প্রস্তুতি শেষ, এখন শুধু তফসিল ঘোষণার অপেক্ষা। তিনি বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আগাম প্রচার–সামগ্রী সরাতে হবে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


‘চ্যালেঞ্জ নেই’—কমিশনার মাছউদ

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন—রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও এতে ইসির কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে না। নিবন্ধিত দলগুলো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনায় অটল।