ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীরা যেন পার পেয়ে না যায় এবং পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়—সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, তারাই ব্যর্থ হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। নির্ধারিত সময়েই ভোট হবে। এখন পর্যন্ত নেওয়া প্রস্তুতিতে কমিশন সন্তুষ্ট।”
গত শুক্রবার ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এর এক দিন আগে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। তপশিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে রোববার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রধানদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়। শুরুতেই সিইসি নাসির উদ্দিন তপশিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একজন সম্ভাব্য প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনাটি আমার কাছে মনে হয়েছে মাথার ওপর বজ্রপাতের মতো। একদিন আগে তপশিল ঘোষণা করলাম, আর পরদিনই এমন ঘটনা ঘটল—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এ সময় সিইসি ভোটের পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাহিনীগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তপশিল ঘোষণার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলা বা বড় কোনো নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশন চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নাশকতাকারী ও অনুপ্রবেশকারীরা যেন কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ কেউ সহযোগীর ছদ্মবেশে ভেতরে ঢুকে নাশকতা ঘটাতে পারে—এই বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। কোনো সন্ত্রাসী যাতে উৎসাহিত না হয়, সে জন্য শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সানাউল্লাহ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, যাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে এবং ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ আটক হয়ে জামিনে মুক্ত হয়েছেন—তাদের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করে থাকে। এই সুযোগে যেন সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে না যায় এবং পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়—সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
হাদির ওপর হামলার তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি জানান, তদন্ত চলমান থাকায় সব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। সেই চেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনকালে কোনো প্রার্থী অস্ত্র বহন করতে পারবেন না বলেও তিনি জানান।
নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সন্ত্রাস দমনে অধিকসংখ্যক চেকপোস্ট বসানো হবে। জামিনে মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণা করেন। তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।